ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে জবা ফুলের চা: বিজ্ঞান কী বলে?

ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়া এখন সারা বিশ্বেই একটি সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা। সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং জীবনধারার পরিবর্তনের পাশাপাশি অনেকেই প্রাকৃতিক উপায় খোঁজেন। জবা ফুলের (Hibiscus sabdariffa) চা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রক্তচাপ ও শর্করা নিয়ন্ত্রণের সম্ভাব্য সহায়ক হিসেবে আলোচনায় এসেছে। তবে এটি কোনো ওষুধ নয়, বরং একটি পুষ্টিগুণসম্পন্ন হারবাল পানীয়।


জবা ফুলের পুষ্টিগুণ

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: অ্যান্থোসায়ানিন ও পলিফেনল জাতীয় যৌগ কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

  • ভিটামিন ও খনিজ: সামান্য পরিমাণ ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও আয়রন শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও বিপাকক্রিয়ায় সহায়ক।

  • প্রাকৃতিক অ্যাসিড: যা শরীরের অ্যাসিড-বেস ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।


গবেষণা কী বলছে

  • রক্তে শর্করা: কিছু ছোট আকারের গবেষণায় দেখা গেছে, জবা ফুলের নির্যাস ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কিছুটা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

  • রক্তচাপ ও হৃদ্‌স্বাস্থ্য: বেশ কিছু স্টাডিতে নিয়মিত জবা চা পান রক্তচাপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করে বলেও প্রমাণ মিলেছে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা হতে পারে।

  • সতর্কতা: গবেষণাগুলো সীমিত ও ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল দিয়েছে। বড় পরিসরে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা এখনও প্রয়োজন, তাই এটিকে কখনোই ওষুধের বিকল্প হিসেবে ধরা উচিত নয়।


কীভাবে তৈরি করবেন

  1. ১–২ চামচ শুকনো জবা ফুল এক কাপ গরম পানিতে দিন।

  2. ৫–৭ মিনিট ঢেকে রাখুন।

  3. ছেঁকে নিয়ে চিনি ছাড়া অথবা হালকা মধু (ডায়াবেটিস থাকলে মধু এড়িয়ে চলাই ভালো) দিয়ে পান করুন।


কারা সাবধান হবেন

  • গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মা

  • নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে এমন ব্যক্তি

  • যারা ডায়াবেটিস বা রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন, কারণ চা ওষুধের প্রভাব বাড়াতে বা কমাতে পারে

নতুন কোনো হারবাল পানীয় নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।


জবা ফুলের চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং সীমিত গবেষণায় রক্তে শর্করা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়; সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও চিকিৎসকের পরামর্শই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল ভিত্তি। জবা চা পরিমিত পরিমাণে পান করা একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হতে পারে, যদি তা সঠিক জীবনধারার অংশ হয়।

en_USEnglish