পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে হামদর্দ  বাংলাদেশের চিফ মোতাওয়াল্লী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া’র শুভেচ্ছা বাণী

————————————————————————-
আসসালামু আলাইকুম । ঈদ মোবারক । ত্যাগের মহিমায় চিরউজ্বল পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশের সেবাগ্রহণকারী, শুভাকাঙ্ক্ষী-শুভানুধ্যায়ী এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক মোবারকবাদ ও শুভেচ্ছা ।
বছর ঘুরে আবার এসেছে পবিত্র ঈদুল আযহা। কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত এই উৎসবের ইতিহাস সুপ্রাচীন। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আদর্শ অনুসরণ করেই সারাবিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কোরবানি দিয়ে থাকেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানির জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশ পেয়েছিলেন । পরপর দু’বার তিনি পশু কোরবানি করেন। তৃতীয়বার একই নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন, পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তাঁর কেউ নেই। হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর নির্দেশের কথা জানান। ইসমাইল (আ.) নির্ভয় চিত্তে সম্মতি দেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্রস্নেহে যেন দুর্বল না হয়ে পড়েন, সে জন্য তিনি নিজের চোখ বেঁধে পুত্রের গলায় ছুরি চালান। আল্লাহ তাআলার অসীম দয়ায় এ সময় হযরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। আল্লাহর প্রতি বান্দার সর্বোচ্চ ত্যাগের এই মহান আদর্শ অনুসরণ করেই হাজার হাজার বছর ধরে চলছে কোরবানির বিধান।
কোরবানি দেওয়া সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভ করতে পারাই মূলত কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য।
মানবকল্যাণে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতেই ভারতের দিল্লীতে ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হামদর্দ। মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মাত্র ৫০ হাজার টাকার পুঁজি এবং প্রায় ছয়গুণ দায়দেনা নিয়ে আমরা হামদর্দকে গড়ে তোলার কাজ শুরু করি। বিগত ৫২ বছর ধরে নানা ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে হামদর্দ এখন সবার আস্থার প্রতিকে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখনো ব্যথার সাথী হয়ে মানুষের পাশে আছে প্রতিষ্ঠানটি। হামদর্দের প্রধানতম কাজ হচ্ছে, গুণগত মানের ওষুধ তৈরি করে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। তৃণমূলের মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা ছড়িয়ে দিতে সারাদেশে প্রায় ৩০০ চিকিৎসাকেন্দ্রের মাধ্যমে নিরন্তরভাবে কাজ করছেন হামদর্দের চিকিৎসক ও বিপণনকর্মীরা। চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে দেওয়া হয় ফ্রি চিকিৎসাপত্র। তাছাড়া বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসহ জাতীয় দিবসগুলো সারাদেশে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় ওষুধ। টঙ্গীর তুরাগ তীরে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমায় এবং রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে বিগত কয়েক যুগ ধরে মুসল্লি ও হাজিদের মধ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দিচ্ছে হামদর্দ। সারাবছর ওষুধ বিক্রি থেকে অর্জিত আয় দিয়ে করা হয় মানুষের নানামুখী কল্যাণ। হামদর্দ স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবাকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে সারাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এতিমখানা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এভাবেই সেবা ও সহমর্মিতার এক উদ্যানে পরিণত হয়েছে হামদর্দ।
হামদর্দকে যারা ভালোবাসেন, সেবা গ্রহণ করেন, পরামর্শ দেন, তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ’ রাখুন এবং প্রত্যেকের জীবনকে প্রশান্তিময় করুন । আবারও ঈদ মোবারক। আল্লাহ হাফেজ।