বর্তমান বিশ্বে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি শুধু একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যকেই ধ্বংস করে না, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবার ও পরিবেশ—সব কিছুতেই এর ছায়া বিস্তার করছে। তাই ধূমপান এখন আর নিছক একটি ব্যক্তিগত অভ্যাস নয়, এটি একটি গুরুতর সামাজিক ব্যাধি।
স্বাস্থ্যগত প্রভাব
ধূমপানে নিকোটিন, টার ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে, যা ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টসহ বহু জটিল ও প্রাণঘাতী রোগের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। শুধু ধূমপানকারীই নয়, প্যাসিভ স্মোকার বা আশেপাশে থাকা ব্যক্তিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন।
অর্থনৈতিক ক্ষতি
একজন ধূমপায়ী নিজের আয় থেকে প্রতিনিয়ত টাকা ব্যয় করেন তামাকজাত দ্রব্যে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক দারিদ্র্য সৃষ্টি করে। পরিবারে খাদ্য, শিক্ষা বা চিকিৎসার জন্য যে অর্থ ব্যয় হওয়া উচিত, তা চলে যায় তামাক কেনার পেছনে। পাশাপাশি ধূমপানের ফলে যেসব রোগ হয়, তা চিকিৎসা করতেও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়—যা দেশের অর্থনীতির উপর একটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
পরিবার ও সামাজিক জীবন
ধূমপানের ফলে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। অনেক সময় ধূমপায়ী ব্যক্তির কারণে স্ত্রী, সন্তান এবং অন্যান্য সদস্য শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। একটি ধূমপায়ীর সন্তানও ধীরে ধীরে একই পথে চলে যেতে পারে, যা সমাজে এক ধরনের অনুকরণীয় ব্যাধি তৈরি করে।
পরিবেশ দূষণ
ধূমপানের ধোঁয়া শুধু ফুসফুসের ক্ষতি করে না, এটি বায়ু দূষণেরও কারণ। পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে আশেপাশের মানুষরা বাধ্য হয় বিষাক্ত ধোঁয়া গ্রহণে। তাছাড়া, ফেলে দেওয়া সিগারেটের ফিল্টার ও তামাকজাত দ্রব্যের আবর্জনা পরিবেশ দূষণ করে।
তরুণ সমাজ ও আসক্তির ঝুঁকি
তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন তৈরি করে থাকে, যা তাদের আকৃষ্ট করে। একবার শুরু করলে আসক্তি তৈরি হয় এবং সেটি ছাড়াও কঠিন হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এটি gateway হিসেবে কাজ করে—যেখান থেকে মাদকসেবনের পথও খুলে যায়।
সমাধানের পথ